১৯৭৫ সালের ঐতিহাসিক সামরিক অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান চরিত্র মেজর শরিফুল হক ডালিম, দীর্ঘ অজ্ঞাতবাস শেষে এক লাইভ সাক্ষাৎকারে তার অভিজ্ঞতা এবং গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার বিশদ বিবরণ তুলে ধরেছেন। সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের ইউটিউব চ্যানেলের এই বিশেষ সাক্ষাৎকারটি দেশে-বিদেশে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিশেষ লাইভে যুক্ত আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর ডালিম” শিরোনামের এই সাক্ষাৎকার রাতারাতি ভাইরাল হয়। সরাসরি ৮ লাখের বেশি মানুষ এটি দেখেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভিডিওটি ৬৫ লাখের বেশি ভিউ পায়।
মেজর ডালিম বলেনন ১৫ আগস্টের ঘটনা কোনো হঠাৎ সিদ্ধান্ত ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই শুরু হওয়া রাজনৈতিক অসন্তোষ এবং নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থার ফল এটি। এই ঘটনাকে শুধু সামরিক অভ্যুত্থান বললে ভুল হবে। এটি বৃহৎ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের একটি অংশ।
সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার শহীদদের সংখ্যা নিয়ে ডালিম বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা ৩০ লাখ বলা হলেও প্রকৃত সংখ্যা তিন লাখের কাছাকাছি। এই সংখ্যাটি পরে রাজনৈতিক কারণে বাড়ানো হয়েছে।
তার এই মন্তব্য নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ তার বক্তব্যকে সমর্থন করলেও, অনেকেই এর তীব্র সমালোচনা করেছেন।
ডালিম বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে কাজী নজরুল ইসলাম বা অন্য কোনো দেশীয় কবির লেখা গান ব্যবহার করা যেত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন ভারতীয় নাগরিক তার লেখা গান আমাদের জাতীয় সংগীত হওয়া নিয়ে আমার আপত্তি রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার এই মন্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন, আবার কেউ একে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক সৃষ্টি বলে অভিহিত করেছেন।
মেজর ডালিম আরও বলেন বিপ্লব একদিনে শেষ হয় না। বর্তমান প্রজন্ম যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সম্পূর্ণ বিজয়ের জন্য আরও সময় এবং ধৈর্য প্রয়োজন। বিপ্লব চলমান প্রক্রিয়া এবং চতুর্থ বিপ্লব আসন্ন।
তিনি তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন ইস্পাতের মতো দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কাজ করলে বিজয় আসবেই।
মেজর ডালিমের এই সাক্ষাৎকার শুধু তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রকাশ নয় এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উন্মোচন করেছে। তার বক্তব্যে উঠে আসা তথ্য নতুন প্রজন্মের ঐতিহাসিক সচেতনতা বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে, তার কিছু বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা এবং বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় এটি আরও গবেষণা ও আলোচনার দাবি রাখে।