গত পাঁচ মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নানা উত্থান-পতন লক্ষ্য করা গেছে। সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন পাঁচ মাসের সময়ে রফতানি বাণিজ্য এবং প্রবাসী আয় কিছুটা স্বস্তি দিলেও, ডলারের উচ্চমূল্য এবং ভেঙে পড়া ব্যাংক খাতের ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থায় অস্বস্তি অব্যাহত রয়েছে।
বিশ্ববাজারে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের রফতানি আয় ভালোভাবে বেড়েছে। গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রফতানি পণ্য দেশের অর্থনীতিতে যোগ করেছে ২৪ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৪ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের রিজার্ভে কিছুটা স্থিতিশীলতা এনেছে। তবে এসব অর্জনের পরও, দেশের অর্থনীতির বাস্তব চিত্র বেশ চ্যালেঞ্জিং।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ব্যাংক খাতের পুনর্গঠন এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। অর্থনীতির গতি বাড়ানোর জন্য সরকার বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে, তবে খাতগুলোতে অদূর ভবিষ্যতে কিছু উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ড. মুস্তফা কে মুজেরি বলেন অর্থনীতি সচল রাখতে হবে আর তার জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে অর্থায়ন।
অপরদিকে দেশের গ্যাস সংকট এবং বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে শিল্পক্ষেত্রের উৎপাদন অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেছেন গ্যাসভিত্তিক শিল্পগুলোতে সমস্যা বাড়ছে ফলে উৎপাদন কমে যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় বাধা।
দেশের ভাঙ্গনধ্বংস হতে থাকা ব্যাংক খাতও সরকারকে একটি বড় চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। সরকার ইতোমধ্যে ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে এবং বিতর্কিত এমডি ও চেয়ারম্যানদের সরিয়ে দিয়েছে, তবে খেলাপি ঋণ কমানো এবং ব্যাংক খাতে সুস্থিতি আনা এখনো একটি বড় সমস্যা।
অর্থনৈতিক সংকটের মাঝে মূল্যস্ফীতির হারও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে খাদ্যপণ্যগুলোর দাম এখনও চড়াই রয়েছে। বিশেষ করে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের বেশি থাকার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষদের দুর্ভোগ বেড়েছে। ড. মুস্তফা আরও বলেন যত দ্রুত শ্রমবাজারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা না যায় তত দ্রুত সামাজিক অসন্তোষ বাড়বে যা আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়া এবং জাতীয় অগ্রগতিকে বিপদে ফেলবে।
রাজস্ব আহরণে ঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার উন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে, এবং একই সঙ্গে বেসরকারি খাতের উৎপাদন কমে যাওয়ায় জাতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধি হারও তলানিতে পৌঁছেছে। বর্তমানে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যণীয়ভাবে কমে গেছে যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ডলারের উচ্চমূল্যের ফলে আর্থিক খাতে চাপ বাড়ছে এবং অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন। সরকারের কাছে এখন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনা এবং দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন সঙ্কটাপন্ন, তবে রফতানি, রেমিট্যান্স এবং ব্যাংক খাতের সংস্কার এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে কিছুটা হলেও ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো দেখা যেতে পারে।