বৃহস্পতিবার, ২৩শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের বিপক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান: ঘরোয়া সংকট, ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের প্রয়োজন

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটের মাঝে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে সম্প্রতি একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ। গত বছরের জুলাই মাসে যে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার আলোকে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। এই বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে নানা মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। কিছু দল এই ঘোষণাপত্রের পক্ষে হলেও, বেশিরভাগই এর বিরোধিতা করছে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসের প্রথম দিন থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনটি প্রথমে কোটা সংস্কারের দাবিতে সীমাবদ্ধ ছিল, তবে কিছুদিনের মধ্যেই তা আরও বিস্তৃত হয়ে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। ওই আন্দোলনে নিহত হয় শত শত ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ। যদিও এই আন্দোলনকে কিছু মানুষ বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করেছেন, তবে সেখানে কোনো বিপ্লবী ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন হলেও আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের ঘোষণাপত্রের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক লুৎফর রহমান বলেন, আমরা চাই চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সাথে এই ঘোষণাপত্রের সম্পর্ক স্থাপন করতে। তিনি আরো বলেন এই বিষয়ে বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং তাদের মতামতও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক সাইফুল হক বলেছেন গত ১৫ বছরের সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই আন্দোলনের সকল অংশীজনের ভূমিকা বিবেচনা করেই একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মনে করেন এটি বিপ্লব হলেও, আক্ষরিক অর্থে এটি ছিল একটি গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তীতে এই শাসনতন্ত্রের অধীনে সরকার গঠন করা হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীও এই ঘোষণাপত্রের পক্ষে না। জামায়াতের নায়েবে আমীর মুজিবুর রহমান বলেন এ আন্দোলনের যে নামই দেয়া হোক না কেন,তার একটি ইতিহাস থাকা উচিত তবে এটি যেন বিভেদ সৃষ্টি না করে সেই বিষয়টি আমাদের নজরে রাখতে হবে।

এদিকে, বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের উদ্যোগ নিয়ে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল সতর্কতা প্রকাশ করেছে। বিএনপির টুকু বলেন এই শাসনতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়নি এর পরিবর্তন এখন সময়োপযোগী নয়।

 

গণতন্ত্র মঞ্চের সাইফুল হক আরও বলেন বর্তমানে দেশ একটি অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে সংবিধান বাতিলের কোনো উদ্যোগ পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে।

 

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স মনে করেন এই ধরনের ঘোষণাপত্র ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য সহায়ক হতে পারে না। এখন প্রয়োজন জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিচালনা করার এবং নির্বাচনের দিকে মনোযোগ দেয়া।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের কোনো উদ্যোগ সফল হতে হলে, তা দেশব্যাপী রাজনৈতিক ঐক্য ও জনগণের সমর্থন অর্জন করতে হবে। বর্তমানে যা রাজনৈতিক অস্থিরতা রয়েছে, তা প্রশমিত করার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে একসঙ্গে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতেই।

 

জানার ইচ্ছা সংবাদপত্রের পক্ষ থেকে, এই বিষয়ে আরো বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন শীঘ্রই প্রকাশিত হবে।

আরও পোস্ট