বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধন বা গুরুত্বপূর্ণ আইনের প্রণয়নের ক্ষেত্রে গণভোটের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ১৯৭৭ ও ১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হলেও ১৯৯১ সালে সাংবিধানিক গণভোটের মাধ্যমে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল। তবে ১৫তম সংশোধনীতে গণভোটের বিধান বাতিল করায় দেশবাসী ও বিশেষজ্ঞ মহলে এই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা ও বিতর্ক চলছে।
গত ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে হাইকোর্ট একটি রায় দেয়, যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং গণভোটের বিধান পুনর্বহাল করা হয়। এই রায়ের ফলে সংবিধানে গণভোটের বিধান নিয়ে নতুন করে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, গণভোট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার হতে পারে। বিশেষ করে জনগণের মতামতের প্রতিফলন হিসেবে গণভোট দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হতে পারে।
প্রখ্যাত আইনজ্ঞ বদিউল আলম মজুমদার গণভোটের পক্ষে মন্তব্য করেছেন গণভোট হচ্ছে জনগণের মতামতের সঠিক প্রতিফলন। কোনো বিষয়ে পরিবর্তন বা সংস্কারের জন্য গণভোটের বিধান প্রয়োজন। এটা জনগণের মতামতকে সম্মান দেয় এবং একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পথ করে দেয়।
এদিকে আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন গণভোটের বিধান সংবিধানে রয়েছে, তবে এটি সাধারণত যেকোনো বিষয়ে করা যায় না। বিশেষ কিছু ধারা সংশোধন করতে গণভোট প্রয়োজন। যেমন সংবিধানের ৮, ৪৮, ৫২ এবং ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে গণভোটের প্রয়োজন। অন্যদিকে অন্যান্য বিষয়ে সংশোধন করতে হলে গণভোটের বাধ্যবাধকতা নেই।
গণভোটের বিষয়টি এখনও রাজনৈতিক ও আইনগত ক্ষেত্রে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন গণভোটের প্রয়োগ যদি সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্যভাবে করা যায়, তবে এটি দেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
সংস্কার কমিশনও বর্তমানে এই বিষয়ে বিবেচনা করছে। তারা বিশেষভাবে সুষ্ঠু প্রয়োগের ওপর জোর দিচ্ছে যাতে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়।
এখন প্রশ্ন উঠছে, সংবিধানে গণভোটের ব্যবস্থার পুনর্বহালের পর কীভাবে এবং কোন বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। ভবিষ্যতে এটি দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে কতটুকু পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে, তা দেখার বিষয়।