বাংলাদেশের রাজনীতির এক নয়া অধ্যায়ে প্রবেশের পর বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। টানা দেড় দশক ক্ষমতায় থাকার পর গণ আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন চতুর্থ মন্ত্রিসভা মাত্র ছয় মাস টিকে ছিল। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার ও বিভিন্ন সেক্টরে নতুন নেতৃত্ব গঠিত হয়।
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার এখন সময়ের দাবি। এই তিনটি বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় ইতোমধ্যেই গঠন করা হয়েছে একাধিক সংস্কার কমিশন। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুবউল্লাহ মনে করেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন—তিনটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধাপরাধের বিচার কিংবা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হলেও তা প্রয়োজন ছিল। তবে ভবিষ্যতে আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের ওপরই থাকবে। আমলাতন্ত্র পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনের সংস্কারকেও নির্বাচন আয়োজনের পূর্বশর্ত হিসেবে দেখা উচিত।
জেষ্ঠ্য আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন জনগণ তার নির্বাচিত প্রতিনিধি দেখতে চায়। বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন একসাথে চলতে পারে। এটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া গণতান্ত্রিক কাঠামোর স্থায়ীত্ব সম্ভব নয়।
গণহত্যার বিচার ও রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে আইনি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে গিয়ে তা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এক ঘোষণায় ৫৩ বছরের জঞ্জাল দূর করা সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিচার ও সংস্কার চলমান রাখতে নির্বাচিত সরকারের ভূমিকাই মূল চালিকা শক্তি হতে পারে।
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিচার সংস্কার ও নির্বাচন—এই তিনটি বিষয়ই রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। দেশের মানুষের প্রত্যাশা এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে আন্তরিকতা এবং কার্যকারিতা বজায় থাকবে।